{getBlock} $results={3} $label={রাজনীতি} $type={headermagazine}

“মৃত্যুকে হারিয়ে যিনি রাজশাহীর রাজনীতি জাগালেন”

প্রকাশঃ
অ+ অ-

এভাবেও ফিরে আসা যায়: রাজশাহীর মামুন অর রশিদের অনুপ্রেরণার গল্প

রাজশাহীর রাজনীতির ইতিহাস বর্ণনা করতে গেলে মামুন অর রশিদ মামুনকে বাদ দিয়ে তা সম্পূর্ণ করা সম্ভব নয়।

তিনি কেবল একজন রাজনীতিক নন — তিনি এক সাহসী সৈনিক, যিনি রাজপথে, রক্তে ও ত্যাগে রাজশাহীর আন্দোলন-সংগ্রামের এক জীবন্ত ইতিহাস রচনা করেছেন।

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অগ্রভাগে:

১৯৯০ সালের স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে রাজশাহীর ছাত্র রাজনীতিতে ছিলেন সামনের সারিতে।

তরুণ বয়সেই রাজনীতি ও জনসেবাকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন মামুন অর রশিদ।

তখন থেকেই তার রাজনীতির মূলমন্ত্র ছিল — “জনগণের পাশে থাকা, দলের কঠিন সময়ে রাজপথ না ছেড়ে যাওয়া।”

ছাত্রজীবনের শুরু থেকে সংগঠিত রাজনীতি করে উঠেছিলেন রাজশাহী মহানগর যুবদলে।

ক্রমে সংগঠনের ভেতরেই নিজের মেধা, সংগঠনদক্ষতা ও কর্মতৎপরতার মাধ্যমে উঠে এসেছেন নেতৃত্বের আসনে।

মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা এক সৈনিক:

২০০৭ সালের ১৯ জুনের ভয়াল রাত।

তৎকালীন সরকারের দমননীতির শিকার হয়ে মামুন অর রশিদ পড়েন “ক্রসফায়ার”-এর মুখে।

পায়ে ছয়টি গুলির চিহ্ন — যা আজও বহন করছেন তিনি।

মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা সেই রাতটি বদলে দেয় তার জীবন, কিন্তু ভাঙতে পারেনি তার মনোবল।

আল্লাহর অশেষ কৃপায় প্রাণে বেঁচে যাওয়ার পরও তিনি রাজনীতি ছেড়ে যাননি; বরং আরও দৃঢ় সংকল্পে রাজনীতির মাঠে ফেরেন।

তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন —
“আমি রাজনীতি করি ক্ষমতার জন্য নয়, মানুষ ও দলের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে।”

রাজনৈতিক জীবনের দীর্ঘপথ:

মামুন অর রশিদের রাজনীতি কেবল পদমর্যাদার নয়, বরং কর্মে ও সংগঠনে।

তিনি ছিলেন রাজশাহী মহানগর যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি, মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এবং পরবর্তীতে মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও সদস্য সচিব।

২০২২ সালে ঘোষিত আহবায়ক কমিটিতে তিনি সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যা দলের দুর্দিনে নেতৃত্বের দায়িত্ব পালনের এক ঐতিহাসিক অধ্যায় হয়ে আছে।

আন্দোলনের সময়ে সাহসী নেতৃত্ব:

২০২৪ সালের উত্তাল রাজনীতি — বিশেষ করে ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজশাহীতে যে কয়েকজন নেতা মাঠে থেকে ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মামুন অর রশিদ মামুন।

যখন চারপাশে ভীতি, গ্রেপ্তার, এবং রাজনৈতিক দমন-নিপীড়নে রাজশাহী শহর প্রায় স্থবির,

তখন তিনি নিজের কর্মীদের সাহস জুগিয়েছেন, রাজপথে নামিয়েছেন এবং শহরের বিভিন্ন এলাকায় দলীয় কর্মসূচি সচল রেখেছেন।

শেখ হাসিনার সরকারের পুলিশ ও প্রশাসনের কঠোর বাধা উপেক্ষা করে তিনি তার নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজশাহীর রাস্তায় নেমেছিলেন হরতাল-অবরোধের সমর্থনে।

যে সময় অন্যরা নীরব, তখন মামুন অর রশিদ প্রমাণ করেছিলেন — রাজনীতি মানে কেবল ক্ষমতার খেলা নয়, বরং ত্যাগ ও নেতৃত্বের মেলবন্ধন।

তার সাহসী নেতৃত্বের কারণেই রাজশাহী মহানগরের আন্দোলন-সংগ্রাম নতুন গতি পায়।

তৃণমূল থেকে শুরু করে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ — সবাই তাকে দেখেছেন এক “কর্মঠ ও নির্ভীক নেতা” হিসেবে।

তারেক রহমানের প্রশংসায় মামুন:

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একবার তার বক্তব্যে রাজশাহীর এই নেতার প্রসঙ্গ টেনে বলেন —"সাধারন মানুষ ভাই কেন আসে আপনার কাছে?রাজশাহীতে মামুনের কথায় বললাম, এরকম মামুন তো হাটে ঘাটে পাড়ায় পাড়ায় অনেক ঘুরে বেড়ায়, তবে সব মামুনের কাছে তো মানুষ যায় না, মানুষ জানে এ বিএনপির মামুন এর কাছে গেলে কাজ হবে "।

এই মন্তব্য শুধু একটি ব্যক্তিগত স্বীকৃতি নয়, বরং দলের নেতৃত্বের প্রতি তৃণমূল আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠে।

ফিরে আসার গল্পে নতুন অধ্যায় :

২০২৫ সালের ১০ আগস্ট রাজশাহী মহানগর বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়,

যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন তারেক রহমান।

সেই সফল কাউন্সিল শেষে তিন মাস পর ঘোষিত কমিটিতে মামুন অর রশিদকে মহানগর বিএনপির সভাপতি করা হয় —

যা রাজশাহীর তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে ছিল দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার বাস্তব রূপ।

তার নেতৃত্বে এখন রাজশাহীর বিএনপি নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে।

দলীয় অফিসে প্রতিদিনই জমছে নেতাকর্মীদের ভিড়,

যে মানুষ একসময় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে আজ শহরের রাজনৈতিক নেতৃত্বে আসীন,

যিনি অন্যায়ের প্রতিবাদে রাজপথে দাঁড়াতে ভয় পাননি,

তিনি প্রমাণ করেছেন — রাজনীতি মানে কেবল পদ নয়, এটি এক আজীবন সংগ্রামের নাম।

রাজশাহীর রাজনীতিতে মামুন অর রশিদ মামুন তাই আজ এক অনুপ্রেরণার প্রতীক।

তার জীবনের গল্পটি যেন বলে দেয় —

“যেখানে সবাই থেমে যায়, সেখান থেকেই শুরু করেন কিছু মানুষ।”

আর তাই আজও রাজশাহীর রাজনৈতিক আকাশে উচ্চারিত হয় এক নাম —

মামুন অর রশিদ: এভাবেও ফিরে আসা যায়।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন